সরকারের ঋণ গ্রহণে সৃষ্টি হয়েছে বড় বিশৃঙ্খলা

রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার কারণে চলতি খরচ মেটাতে সরকারকে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিতে হচ্ছে। সাধারণত ব্যাংক খাত থেকে সরকার ঋণ নেয়, তবে এবার ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের কারণে সরকার চাহিদা অনুযায়ী ঋণ সংগ্রহ করতে পারছে না। 

Jan 5, 2025 - 09:57
 0  3
সরকারের ঋণ গ্রহণে সৃষ্টি হয়েছে বড় বিশৃঙ্খলা

রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার কারণে চলতি খরচ মেটাতে সরকারকে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিতে হচ্ছে। সাধারণত ব্যাংক খাত থেকে সরকার ঋণ নেয়, তবে এবার ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের কারণে সরকার চাহিদা অনুযায়ী ঋণ সংগ্রহ করতে পারছে না। 

এদিকে, সরকার তারল্য সংকট মোকাবিলা করতে ব্যাংক খাত থেকে আগের ঋণ কিছুটা পরিশোধ করছে, ফলে নন-ব্যাংক খাতের ওপর চাপ বাড়ছে। সরকারের নন-ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করেছে ফাইন্যান্স কোম্পানি, বিমা কোম্পানি এবং সরকারি সঞ্চয়পত্র বিক্রি। 

এ বছর নন-ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। তবে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই পাঁচ মাসেই ২৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ শতাংশ। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, সরকারকে এর চেয়ে অনেক বেশি ঋণ নিতে হবে। 

তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না, অন্যদিকে নন-ব্যাংক খাতের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। এছাড়া, নন-ব্যাংক খাতে ঋণের সুদের হারও বেশি হওয়ায় খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে সরকারের ঋণ গ্রহণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে সরকার ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ ঋণ গ্রহণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যাংক খাত থেকে এবং ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা নন-ব্যাংক খাত থেকে নেওয়ার কথা। 

তবে চলতি বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাত থেকে মাত্র ২২ হাজার ২৯০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ। একই সময় সরকার আগের ঋণ থেকে ৩ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। 

সরকারের ঋণের ওপর চাপ বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যাংক খাতে দুর্বলতার কথা বলা হচ্ছে। একদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কম হারানো ঋণের মাধ্যমে টাকা ছাপানোর প্রবণতা কমিয়েছে, অন্যদিকে, নন-ব্যাংক খাতের ঋণের সুদের হার বেশি হওয়ায় সরকার অর্থনীতি সামলাতে সমস্যা অনুভব করছে। 

এছাড়া, বাংলাদেশের নন-ব্যাংক খাত সেভাবে উন্নত হয়নি। সেকেন্ডারি বন্ড মার্কেট এখনও সক্রিয় হয়নি এবং প্রাইমারি বন্ড মার্কেটে কেবলমাত্র ব্যাংক, ফাইন্যান্স কোম্পানি এবং বিমা কোম্পানির অংশগ্রহণ রয়েছে। সাধারণ সঞ্চয়কারীরা এখনো এতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নয়, যার কারণে এ খাত থেকে সরকারের ঋণের জোগান সেভাবে আসছে না। 

অথচ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বারবার বলছে, সরকারের ঋণ গ্রহণের জন্য ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নন-ব্যাংক খাত এবং ট্রেজারি বিল ও বন্ড বিক্রি করা উচিত। 

এ পরিস্থিতিতে, সরকারের খরচ বাড়লেও রাজস্ব আয় কমেছে এবং এর ফলে ঋণ গ্রহণের পরিমাণও বাড়ছে। গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত রাজস্ব আয় ১ দশমিক ০৩ শতাংশ কমেছে, যা সরকারের ঋণের চাহিদা আরও বাড়িয়েছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow