ডায়াবেটিস থাকলে কি ড্রাই ফ্রুট খাওয়া নিরাপদ?
বর্তমানে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, আর এই সময়েই ড্রাই ফ্রুটস বা শুকনো ফল স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে এক প্রশ্ন মনে আসতেই পারে—ডায়াবেটিস থাকলে কি ড্রাই ফ্রুটস খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী? রাতে মুঠো মুঠো শুকনো ফল খেলে কি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়বে না?
বর্তমানে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, আর এই সময়েই ড্রাই ফ্রুটস বা শুকনো ফল স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে এক প্রশ্ন মনে আসতেই পারে—ডায়াবেটিস থাকলে কি ড্রাই ফ্রুটস খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী? রাতে মুঠো মুঠো শুকনো ফল খেলে কি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়বে না?
পুষ্টিবিদদের মতে, যদি পরিমিত পরিমাণে শুকনো ফল খাওয়া হয়, তাহলে এর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না। তবে, ডায়াবেটিস থাকলে কোন শুকনো ফলগুলো খাওয়া উচিত, সেটা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই শুকনো ফলগুলো পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ এবং সুস্থ শরীর বজায় রাখার পাশাপাশি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। শুকনো ফলগুলোতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, যা হৃদরোগ প্রতিরোধ, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। তবে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সঠিক বাদাম ও শুকনো ফল নির্বাচন এবং পরিমাণ মেনে খাওয়ার গুরুত্ব রয়েছে। পুষ্টিবিদ মিল্টন বিশ্বাস জানিয়েছেন, ব্লাড সুগার বা ডায়াবেটিস থাকলে কোন শুকনো ফল খাওয়া উচিত।
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যা তখন ঘটে যখন রক্তে গ্লুকোজ বা চিনির পরিমাণ অত্যধিক বৃদ্ধি পায়। গ্লুকোজ শরীরের প্রধান শক্তির উৎস এবং এটি আমাদের খাওয়ার মাধ্যমে পাওয়া যায়। প্যানক্রিয়াসের ইনসুলিন হরমোন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ইনসুলিন গ্লুকোজকে শরীরের কোষে প্রবেশ করতে সাহায্য করে, যাতে শক্তি তৈরি হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ডায়াবেটিস হলে ইনসুলিনের উৎপাদন পর্যাপ্ত পরিমাণে হয় না। যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তবে এটি রক্তনালী ও স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তবে একটি সুষম ডায়েটের মাধ্যমে এই রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য শুকনো ফল খাওয়াটা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার একটি কার্যকর উপায়।
কিন্তু শুকনো ফলগুলো ডায়াবেটিসের জন্য কেন উপকারী? পুষ্টিগতভাবে এগুলো উপকারী, কারণ এতে ফাইবার রয়েছে, যা গ্লুকোজকে ধীরে ধীরে শোষণ করতে সাহায্য করে, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায় না। শুকনো ফলে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়, টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় এবং সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক।
### ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী শুকনো ফলগুলো:
1. **আলমন্ড (আমন্ড)**
আমন্ড ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর। ইউরোপীয় জার্নাল অফ নিউট্রিশনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, আমন্ডে কম কার্বোহাইড্রেট ও বেশি ফাইবার রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে রক্তে শর্করার সঠিক নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
2. **আখরোট**
আখরোটে রয়েছে হার্টের জন্য উপকারী ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা প্রদাহ কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। আখরোট রক্তে গ্লুকোজের স্তর ধীরে ধীরে বাড়ায়, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
3. **পেস্তা**
পেস্তায় প্রোটিন ও ফাইবারের পরিমাণ অনেক বেশি, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি কম কার্বোহাইড্রেটযুক্ত এবং এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতি রোধ করে।
4. **ফিগ (ডুমুর)**
ফিগে থাকা ফাইবার রক্তে শর্করার শোষণ ধীরে ধীরে করে, যার ফলে গ্লুকোজের স্তর তাড়াতাড়ি বাড়ে না। এটি কম গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত, যা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়তে বাধা দেয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এই শুকনো ফলগুলো যথাযথ পরিমাণে খেলে শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি কমানো যায়।
What's Your Reaction?