এক রাউন্ডও গুলি করি নি, তবে নামের পাশে লেখা ১৭ রাউন্ড

বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী নিহত হন এবং আহত হন অনেকেই। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যু ওই আন্দোলনের একটি নির্মম উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দায়ের হওয়ার পর, অনেক পুলিশ সদস্য মামলা দায়েরের আসামি হয়েছেন। 

Jan 5, 2025 - 08:59
 0  2
এক রাউন্ডও গুলি করি নি, তবে নামের পাশে লেখা ১৭ রাউন্ড

বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী নিহত হন এবং আহত হন অনেকেই। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যু ওই আন্দোলনের একটি নির্মম উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দায়ের হওয়ার পর, অনেক পুলিশ সদস্য মামলা দায়েরের আসামি হয়েছেন। 

এ পর্যন্ত ৯৫২ পুলিশ সদস্য হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন, যার মধ্যে ৫৬ শতাংশই পুলিশের নিচু পদমর্যাদার সদস্য, যেমন এসআই, এএসআই ও কনস্টেবল। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসআইদের বিরুদ্ধে, যাদের মধ্যে ২৭৬ জন এসআই রয়েছেন। এছাড়া, ৯১ জন এএসআই, ১৫৭ জন কনস্টেবল এবং ৮ জন পুলিশের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমন করতে এসআই, এএসআই এবং কনস্টেবলরা এগিয়ে গিয়ে গুলি চালিয়েছেন। গাজীপুরের কোনবাড়িতে ৫ আগস্ট আন্দোলনের সময় এক কলেজ ছাত্র মো. হৃদয় (২০) পুলিশের গুলিতে নিহত হন। সেই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে, পুলিশ সদস্য আকরাম হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। 

এ পর্যন্ত ২৮ পুলিশ সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন, তবে অনেকেই এখনও পলাতক। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা দাবি করছেন, তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশেই গুলি চালিয়েছেন। কিছু পুলিশ সদস্য এমনও আছেন যারা গুলি ছোঁড়েননি, কিন্তু তাও তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর জানিয়েছেন, 'বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের বিরুদ্ধে যেসব মামলা দায়ের হয়েছে, তা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। যারা সত্যিকারের অপরাধী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।'

এদিকে, মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ৪৭ জন সাবেক আইজিপি এবং সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি, ২৩ সাবেক ও বর্তমান ডিআইজি, ৬৩ পুলিশ সুপার, ৫৭ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ৩২ সহকারী পুলিশ সুপার এবং ১৫৩ ইন্সপেক্টরও আছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে সাবেক ডিবি প্রধান ডিআইজি হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে, যিনি ১৭১টি মামলার আসামি। 

সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে ১৫৫টি, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ১১৭টি এবং অতিরিক্ত ডিআইজি বিপ্লব কুমার সরকারের বিরুদ্ধে ১২৫টি মামলা হয়েছে। তবে, এদের মধ্যে শুধুমাত্র চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন গ্রেফতার হয়েছেন, অন্যরা এখনও পলাতক রয়েছেন। 

পুলিশের নিচু স্তরের ২৭৬ এসআই, ৯১ এএসআই এবং ১৫৭ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে, এবং তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। অনেক এসআই জানিয়েছেন, তারা কর্মস্থলে অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের সাথে গুলি খরচ ভাগাভাগি করে নামের পাশে গুলি খরচ দেখানোর জন্য অভিযুক্ত হয়েছেন। 

এমন পরিস্থিতিতে, পুলিশের বিরুদ্ধে এই মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে এবং আরও অনেক আসামি গ্রেফতারের অপেক্ষায় রয়েছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow