মোনালিসার ছবি এত বিখ্যাত হওয়ার কারণ কী?

জীবনে একবারও মোনালিসার ছবির রেপ্লিকা না দেখেছেন বা ছবিটির সম্পর্কে শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। রেনেসাঁ যুগের চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা এই পাঁচ’শ বছরের পুরনো ছবিটি সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত চিত্রকর্ম। 

Jan 5, 2025 - 09:51
 0  2
মোনালিসার ছবি এত বিখ্যাত হওয়ার কারণ কী?

জীবনে একবারও মোনালিসার ছবির রেপ্লিকা না দেখেছেন বা ছবিটির সম্পর্কে শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। রেনেসাঁ যুগের চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা এই পাঁচ’শ বছরের পুরনো ছবিটি সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত চিত্রকর্ম। 

প্রশ্ন হলো, যুগে যুগে অনেক শিল্পীই এমন ছবি এঁকেছেন যা শিল্পগুণের দিক থেকে ‘মাস্টারপিস’, তবে মোনালিসা ছবিটি এত বেশি পরিচিত কেন? 

বিশ্লেষকরা বলেন, কেবল শিল্পগুণ নয়, ছবিটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্য এবং নানা ঘটনা এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় চিত্রকর্মের তালিকায় পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। 

**মোনালিসার সৃষ্টি:**

বলা হয়, ১৫০৩ থেকে ১৫১৭ সালের মধ্যে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি মোনালিসার ছবি আঁকেন। প্রথমে ইতালির ফ্লোরেন্সে এবং পরবর্তীতে ফ্রান্সে রাজা ফ্রান্সিস প্রথমের আমন্ত্রণে ছবিটির ওপর কাজ করেন। 

গবেষণা সংক্রান্ত অলাভজনক মিডিয়া ‘দ্য কনভার্সেশনে’ প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ছবিটি আঁকা হয়েছিল একজন সিল্ক ব্যবসায়ীর অনুরোধে। লিওনার্দোর জীবনীকার জর্জিও ভাসারি ১৫৫০ সালে লিখেছিলেন যে, সিল্ক ব্যবসায়ী ফ্রান্সেসকো ডেল গিওকোন্ডো লিওনার্দোকে তার স্ত্রী লিসা গেরারদিনির প্রোট্রেট আঁকতে অনুরোধ করেছিলেন। 

**মোনালিসার নামকরণ:**

ইতালিতে 'মোনা' শব্দটি কোনো নারীর সম্মানে ব্যবহৃত হত, এবং ছবির নারীর নাম ছিল লিসা। তাই, এই দুটি শব্দ মিলিয়ে ছবিটির নাম রাখা হয় ‘মোনালিসা’। তবে ছবিটি আসলেই লিসার ছিল কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিছু গবেষক মনে করেন, ছবিটি লিওনার্দোর নিজের পোট্রেট, আবার কেউ বলেন এটি তাঁর মা অথবা বান্ধবীর ছবি। তবে, ২০১৫ সালে প্যারিসের বিজ্ঞানী পাসকাল কোট নতুন তত্ত্ব উপস্থাপন করেন, যেখানে তিনি দাবি করেন ছবির পেছনে লিসা গেরারদিনির মুখ রয়েছে।

**মোনালিসার মূল্য:**

১৯৬২ সালে ছবিটি ইনস্যুরেন্সের আওতায় আনা হলে তার মূল্য ধরা হয়েছিল ১০ কোটি ডলার। বর্তমানে, মূল্যস্ফীতি ধরলে, এর বাজারমূল্য প্রায় ৮৩ কোটি ডলার হতে পারে। তবে, ২০২০ সালে ফরাসি উদ্যোক্তা স্টিফেন ডিস্টিংগুইন মোনালিসা বিক্রির প্রস্তাব দিলেও শিল্পী-সংশ্লিষ্টরা তার এই মতামত খারিজ করেন।

**ছবিটির বৈশিষ্ট্য:**

মোনালিসা ছবিটির সবচেয়ে আলোচিত দিক হলো তার রহস্যময় হাসি। ছবির মধ্যে এমনভাবে রঙের ব্যবহার করা হয়েছে যে, প্রথমে মনে হয় নারীটি হাসছেন, তবে যদি তাকে মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকেন, তাহলে সেই হাসি ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়। এছাড়া, ছবির চোখগুলো এমনভাবে আঁকা হয়েছে যে, যেখানেই দাঁড়ান, চোখ যেন সেই দিকেই তাকিয়ে থাকে, যা 'মোনালিসা এফেক্ট' নামে পরিচিত।

**মোনালিসার চুরি এবং বিশ্বজুড়ে তার খ্যাতি:**

১৯১১ সালে ল্যুভর জাদুঘর থেকে মোনালিসা চুরি হয়ে যায়, যা একে বিশ্বব্যাপী আরও বেশি পরিচিত করে তোলে। এই চুরির পর, মোনালিসার ছবির ঝুলানোর খালি জায়গাটিও মানুষের আগ্রহের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। দু'বছর পর, ছবিটি ইতালি থেকে উদ্ধার হয়। ১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং ১৯৭৪ সালে জাপানে মোনালিসার প্রদর্শনী তাকে 'সেলিব্রেটি' তকমা এনে দেয়।

সব মিলিয়ে, মোনালিসার খ্যাতি কেবল শিল্পের উৎকর্ষতার কারণে নয়, তার সঙ্গে জড়িত নানা রহস্য, ইতিহাস এবং ঘটনার জন্য এটি বিশ্বজুড়ে এক অনন্য অবস্থান লাভ করেছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow