গ্রিনল্যান্ডের অদ্ভুত ধাতব পাহাড় কীভাবে গেল মার্কিন মিউজিয়ামে
বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড, যা প্রায় সম্পূর্ণ তুষারে ঢাকা, সেখানে কোনো সবুজের দেখা মেলা যায় না। এ দ্বীপটি ২১ কোটি ৬৬ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হলেও এর অধিবাসীর সংখ্যা মাত্র ৫৭ হাজারের কাছাকাছি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড, যা প্রায় সম্পূর্ণ তুষারে ঢাকা, সেখানে কোনো সবুজের দেখা মেলা যায় না। এ দ্বীপটি ২১ কোটি ৬৬ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হলেও এর অধিবাসীর সংখ্যা মাত্র ৫৭ হাজারের কাছাকাছি।
গ্রিনল্যান্ডের বাসিন্দাদের সাধারণত আমরা এস্কিমো বলে জানি, তবে বর্তমানে এই নামটি অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয় না। তারা নিজেদের ‘ইনুইট’ বা ‘মানুষ’ হিসেবে পরিচিতি পছন্দ করেন। মেরু অঞ্চলে তীব্র শীত ও তুষারের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা এই জনগণের শক্তি এবং কষ্টের কাহিনী ইউরোপীয় অনুসন্ধানকারীদের নজরে আসে ১৮ শতকে।
গ্রিনল্যান্ডের এই বাসিন্দারা মূলত মাছ ধরার ও শিকারের মাধ্যমে জীবনযাপন করেন। ইউরোপ থেকে আসা অভিযাত্রীরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন, স্থানীয়রা শিকারের জন্য লোহার অস্ত্র ব্যবহার করে। ১৮১৮ সালে ইংল্যান্ডের অভিযাত্রী ক্যাপ্টেন জস রোস, গ্রিনল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে স্থানীয় ইনুইটদের সাথে যোগাযোগ করে, তাদের শিকার করার অস্ত্রের ধাতব উপাদান দেখতে পান।
ক্যাপ্টেন রোস প্রথমে ভেবেছিলেন, এই লোহা কোথাও ভেসে আসা পরিত্যক্ত জাহাজ থেকে পাওয়া হয়েছে। কিন্তু একজন স্থানীয় ইনুইট তাকে জানান, বরফে ঢাকা ওই অঞ্চলে একটি ধাতব পাহাড় লুকিয়ে আছে। রোস, সেই অমূল্য ধাতব পাহাড় খুঁজে বের করার জন্য একাধিক দুর্গম এলাকায় খোঁজ শুরু করেন, তবে তাতে তিনি সফল হননি। তার প্রচেষ্টার পর, গ্রিনল্যান্ডের সেই রহস্যময় পাহাড়টির গল্প ইউরোপে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।
১৮১৮ সাল থেকে ব্রিটেন, সুইডেন ও ডেনমার্কের অভিযাত্রীরা বার বার গ্রিনল্যান্ডে গিয়ে সেই পাহাড় খুঁজতে চেষ্টা করেন, কিন্তু কেউই সফল হয়নি। এর পর, গ্রিনল্যান্ডের বুকে লোহার পাহাড়টি প্রথম আবিষ্কার করেন আমেরিকান নৌবাহিনীর সদস্য রবার্ট পিয়েরি, যিনি স্থানীয় ইনুইটদের ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন।
১৮৯৪ সালে, রবার্ট পিয়েরি স্থানীয় এক ইনুইটের সাহায্যে সেই লোহার পাহাড় খুঁজে পান। তিনি বুঝতে পারেন, এটি কোনো সাধারণ ধাতু নয়, বরং এটি মহাকাশ থেকে পড়া একটি উল্কাপিণ্ডের অংশ। ধারণা করা হয়, প্রায় ১০ হাজার বছর আগে এটি গ্রিনল্যান্ডে আছড়ে পড়ে। উল্কাপিণ্ডটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সময় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়, এবং তার মধ্যে সবচেয়ে বড় টুকরোটি গ্রিনল্যান্ডে পড়ে।
রবার্ট পিয়েরি ওই উল্কাপিণ্ডটি আমেরিকার বাজারে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে গ্রিনল্যান্ড থেকে তা পরিবহন করার জন্য স্থানীয় ইনুইটদের সাহায্য নেন। এই কাজটি ছিল অত্যন্ত কঠিন, কারণ সে সময় উন্নত যন্ত্রপাতি গ্রিনল্যান্ডে ছিল না। উল্কাপিণ্ডটি উপকূলে নিয়ে আসতে তিন বছর সময় লেগে যায়। ১৮৯৭ সালে, তিনি উল্কাপিণ্ডটি ‘আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি’তে ৪০ হাজার ডলারে বিক্রি করেন, যা আজকের মুদ্রায় প্রায় আট কোটি টাকার সমান।
তবে, রবার্ট পিয়েরি তার অর্জিত অর্থের একটুকুও স্থানীয় ইনুইটদের সঙ্গে শেয়ার করেননি, যারা তাকে উল্কাপিণ্ডটি পরিবহন করতে সাহায্য করেছিলেন। এর ফলে, একটি সুখী পরিবার এবং পাঁচ নিষ্পাপ মানুষের জীবন ধ্বংস হয়ে যায়।
What's Your Reaction?