আওয়ামী সিন্ডিকেটের সুপারিশে এখনো চলছে চাকরি বাণিজ্য

খুলনা বিভাগের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো চলছে আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেটের সুপারিশে রমরমা নিয়োগ বাণিজ্য। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পরেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে ১৫ জন নতুন কর্মচারী নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

Dec 25, 2024 - 04:57
 0  0
আওয়ামী সিন্ডিকেটের সুপারিশে এখনো চলছে চাকরি বাণিজ্য

খুলনা বিভাগের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো চলছে আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেটের সুপারিশে রমরমা নিয়োগ বাণিজ্য। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পরেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে ১৫ জন নতুন কর্মচারী নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যসহ সিন্ডিকেটে পরিবর্তন হলেও খুলনার শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় যেন এক অঘোষিত আওয়ামী সাম্রাজ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে সাংবাদিকরা তথ্য পেতে কঠিন বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন, এবং প্রবেশের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।

**অভিযোগ: আওয়ামী পরিবারের পুনর্বাসন**

স্থানীয়দের অভিযোগ, উপাচার্য মাহবুবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়কে আওয়ামী লীগের পারিবারিক সম্পত্তিতে পরিণত করেছেন। উপাচার্য গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বাসিন্দা এবং তিনি খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আলী আকবর টিপুর মামা। এই পরিচয়ই তিনি উপাচার্য হওয়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়েছেন বলে জানা গেছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর, ২৭ আগস্ট উপাচার্য হঠাৎ করে সিন্ডিকেট সভা ডেকে ১৫ জনকে নিয়োগের অনুমোদন নেন। যদিও এই সভা অনলাইনে অনুষ্ঠিত হলেও অধিকাংশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন না, এবং কেউ কেউ এই নিয়োগের ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করলেও উপাচার্য তা উপেক্ষা করেন। 

নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন জুয়েলের শ্যালিকার ছেলে, শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়, ব্যক্তিগত সহকারীর স্ত্রী, সাবেক প্যানেল মেয়রের ভাগিনা ও ভাতিজাসহ বেশ কয়েকজন দলের সদস্য রয়েছেন। নিয়োগের প্রধান যোগ্যতা ছিল তারা সবাই আওয়ামী পরিবারের সদস্য।

**নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বেচ্ছাচারিতা ও দলীয়করণ**

অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়োগের জন্য উপাচার্য নিজেই প্রার্থীদের জন্য প্রশ্নপত্র তৈরি করতেন, তাদের খাতার মূল্যায়ন করতেন এবং কোন পদে কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে তা তিনিই চূড়ান্ত করতেন। পছন্দের প্রার্থীদের আগে থেকেই প্রশ্ন জানিয়ে দেওয়া এবং লিখিত পরীক্ষার খাতায় নম্বর বাড়ানোর অভিযোগও রয়েছে। ভাইভা বোর্ডে যারা ছিলেন, তারাও উপাচার্যের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতেন। এর ফলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া একটি পারিবারিক সিন্ডিকেট, স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়োগ-বাণিজ্য, এবং দলীয়করণের শিকার হয়েছে।

**নতুন নিয়োগের অনুমোদন: আরও বিতর্ক**

২৭ আগস্টের ১০ম সিন্ডিকেট সভায় যাদের নিয়োগ অনুমোদন করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে ৪ জন যোগদান না করায় ৩ ডিসেম্বর ১১তম সিন্ডিকেট সভা ডেকে তাদের স্থানে নতুন নিয়োগ অনুমোদন দেন উপাচার্য। রেজিস্ট্রার পদে কেএম গোলাম রব্বানীর পরিবর্তে আওয়ামী পরিবারের সদস্য আবু নাসের ফারুককে নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়া, প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহাজালাল সুজনের চাচাতো ভাই, অফিস সহকারী ও কম্পিউটার টাইপিস্ট পদে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতির ছেলে হাসিবুর রহমান, এবং অফিস সহায়ক পদে আত্ম প্রত্যয় মল্লিকসহ আরও বেশ কয়েকজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

**২০১২ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি: আরও অভিযোগ**

এর আগে ২০২২ সালের ৪ আগস্ট প্রথমবার ২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তখন যাদের চাকরি হয়, তাদের মধ্যে ছিলেন সেকশন অফিসার শেখ আশিক আহম্মেদ কাইয়ুম, যিনি শেখ সালাউদ্দিন জুয়েলের বড় শ্যালিকার ছেলে। এছাড়া, সহকারী প্রোগ্রামার মোস্তফা রাকিব রায়হান ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র আলী আকবর টিপুর ভাগিনা।

**অভিযোগের প্রতিক্রিয়া: জনতার প্রত্যাশা এবং কর্তৃপক্ষের অবস্থান**

খুলনার নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, "৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর সবাই আশা করেছিলাম যে দেশে ইতিবাচক পরিবর্তন হবে। যদি এখনো দুর্নীতি, লুটপাট, এবং নিয়োগ-বাণিজ্য চলতে থাকে, তাহলে এত প্রাণ আর রক্ত বৃথা যাবে। সরকারের উচিত অবিলম্বে পতিত সরকারের দুর্নীতিবাজদের অপসারণ করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারে এমন ব্যক্তিদের দিয়ে সিন্ডিকেট গঠন করা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করা।"

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে দারোয়ান ৪০ মিনিট গেটে দাঁড়িয়ে রাখেন। পরে প্রবেশের অনুমতি দিলে উপাচার্যের একান্ত সচিব নুরুল মোমেন সব প্রশ্ন লিখে দিতে বলেন। এরপর তিনি জানান, "ভিসি স্যার ব্যস্ত আছেন, এখন দেখা করতে পারবেন না," এবং পরে মোবাইল ফোনে উপাচার্যের কাছ থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow