বাদাম চাষি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও নোবেল বিজয়ী: এক অসাধারণ যাত্রা

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ১০০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠন *কার্টার সেন্টার* মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। রবিবার সকালে তিনি নিজের বাড়িতে, জর্জিয়ার প্লেইনসে, শান্তিপূর্ণভাবে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

Dec 30, 2024 - 05:52
 0  5
বাদাম চাষি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও নোবেল বিজয়ী: এক অসাধারণ যাত্রা

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ১০০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠন *কার্টার সেন্টার* মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। রবিবার সকালে তিনি নিজের বাড়িতে, জর্জিয়ার প্লেইনসে, শান্তিপূর্ণভাবে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তার ছেলে চিপ কার্টার বলেন, “আমার বাবা শুধু আমার জন্যই নয়, যারা শান্তি, মানবাধিকার এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় বিশ্বাস করেন, তাদের জন্য তিনি ছিলেন এক বিশাল অনুপ্রেরণা এবং হিরো।”

১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জিমি কার্টার। তিনি দীর্ঘতম সময় বেঁচে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। 

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাকে "নীতিবান, বিশ্বাসী এবং বিনয়ী" হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও তার স্ত্রী হিলারি ক্লিনটনও জিমি কার্টারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, “কার্টার তার জীবনভর মানুষের সেবা করেছেন।” 

ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জর্জ ডব্লিউ বুশসহ অন্যান্য নেতারাও তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়ে জিমি কার্টার আমেরিকান জনগণের কাছে কখনও মিথ্যা না বলার অঙ্গীকার করেছিলেন।

ক্যারিয়ারের শুরুতে, ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি শেষে, জর্জিয়ার বাদাম চাষি হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হন, যিনি জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্ব দিয়েছিলেন। মিসর ও ইসরাইলের মধ্যে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদনে তার ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। তবে ইরান জিম্মি সংকট এবং আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন মোকাবেলা করতে গিয়ে তাকে বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।

জিমি কার্টার এক মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৮০ সালের নির্বাচনে রোনাল্ড রিগ্যানের কাছে পরাজিত হন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নেওয়ার পর তিনি নিজের সুনাম পুনরুদ্ধারে নিবেদিত ছিলেন। শান্তি, মানবাধিকার এবং পরিবেশের সুরক্ষায় তিনি বিরামহীনভাবে কাজ করে গেছেন, যা তাকে ২০০২ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার এনে দেয়।

জিমি কার্টার ১৯২৪ সালের ১ অক্টোবর জর্জিয়ার ছোট শহর প্লেইনসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা, পারিবারিক ব্যবসায় বাদাম চাষ করতেন, আর মা ছিলেন নার্স। স্কুলজীবনে তিনি ছিলেন এক প্রতিভাবান বাস্কেটবল খেলোয়াড়। পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে সাত বছর সাবমেরিন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৩ সালে বাবার মৃত্যুর পর পারিবারিক ব্যবসা পরিচালনা করতে ফিরে আসেন তিনি। রাজনীতিতে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল তৃণমূল থেকে। 

১৯৭০ সালে জর্জিয়ার গভর্নর নির্বাচিত হয়ে, কার্টার একে একে বিভিন্ন সামাজিক ও নাগরিক অধিকার বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সময়, তিনি নিজেকে পেশাদার রাজনীতিকের চেয়ে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে তুলে ধরেন এবং জয়ী হন। 

তার প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম দিনেই তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন। তার সময়ই জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে প্রথমবার সরকারিভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। 

তিনি মধ্যপ্রাচ্য শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং ১৯৭৮ সালে মিসর ও ইসরাইলের মধ্যে ঐতিহাসিক ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি সফলভাবে সম্পাদন করেন। কিন্তু তার মেয়াদে ইরান জিম্মি সংকট এবং আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন তাকে কঠিন সময়ের মুখোমুখি করেছিল।

১৯৮০ সালে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি রোনাল্ড রিগ্যানের কাছে হেরে যান। তবে তার পরবর্তী জীবনে তিনি শান্তি, মানবাধিকার ও পরিবেশ রক্ষায় বিশ্বব্যাপী কাজ করে যান, যা তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার এনে দেয়।

২০১৫ সালে তার শরীরে ক্যান্সার শনাক্ত হয়, এবং তিনি দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে তার স্ত্রী রোজালিন কার্টারও মারা যান।

তিনি ১৯৮৪ সালে চ্যারিটি কার্যক্রম শুরু করেন এবং চার হাজারের বেশি বাড়ি সংস্কারে সহায়তা করেন। তার জীবন ছিল একাধারে রাজনৈতিক, মানবিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অনুপ্রেরণামূলক। “ধর্ম বিশ্বাস এবং পাবলিক সার্ভিস কখনও আলাদা করা যায় না,” একসময় তিনি বলেছিলেন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow