দুবাইয়ে আরও ৮৫০ বাংলাদেশির সম্পদ শনাক্ত
আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের নামে-বেনামে অর্থ পাচারের ঘটনা রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছে। পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাহায্য চেয়ে কাজ শুরু করেছে এবং অভ্যন্তরীণ তদন্তও চলছে।
আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের নামে-বেনামে অর্থ পাচারের ঘটনা রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছে। পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাহায্য চেয়ে কাজ শুরু করেছে এবং অভ্যন্তরীণ তদন্তও চলছে। সম্প্রতি দুবাইতে আরও ৮৫০ বাংলাদেশির তথ্য পাওয়া গেছে, যাদের সম্পদ তাদের আয়কর রিটার্নে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
টাস্কফোর্সের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে জানান, সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলোর সীমাবদ্ধতার কারণে পাচারকারীদের সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে সম্পদ গড়ে তুলেছে, কিন্তু নিবন্ধন অধিদপ্তরের কাছে এসব সম্পদের তথ্য জানতে চাইলেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে গাজীপুরে এক সন্দেহভাজনের সম্পত্তি নিয়ে সিআইডি তদন্ত চালালে, প্রথমে সাবরেজিস্ট্রি অফিস থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে পরবর্তী সময়ে পুলিশ নিজস্ব অনুসন্ধান চালিয়ে ওই ব্যক্তির নামে ৭০টি সম্পত্তি খুঁজে পায়।
সম্পদ পুনরুদ্ধারের আরেকটি বড় সমস্যা হলো, বেশিরভাগ অর্থ পাচারকারীরা তাদের সম্পদ বেনামে রেখেছেন। পর্যাপ্ত তথ্য থাকা সত্ত্বেও আইনি জটিলতার কারণে এসব সম্পত্তি জব্দ করা সম্ভব হচ্ছে না।
সম্প্রতি প্রকাশিত অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে যে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা। এই পরিমাণ অর্থ গত ৫ বছরের জাতীয় বাজেটের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ প্রতি বছর প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে, যিনি আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন, তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৮ কোটি টাকা, অথচ তার আয় ছিল মাত্র ৭৪ লাখ টাকা এবং আয়কর দেওয়া হয়েছে ১৯ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তার সম্পদ ছিল ১৭ কোটি টাকা এবং আয় ৭৪ লাখ টাকা। যদিও তার দুইটি গাড়ি ছিল, তিনি আয়কর ফাইলে একটির কথা উল্লেখ করেছেন এবং এর মূল্য দেখিয়েছেন ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু একটি আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাবেক এই মন্ত্রী যুক্তরাজ্যে ২৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে ৩৬০টি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন, যার মূল্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও, তিনি দুবাই, নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়ায় ৫০০টিরও বেশি বাড়ি কিনেছেন, যার মূল্য প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার (৮ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা)।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইসির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জাভেদসহ এসব ব্যক্তিদের সম্পদ অনুসন্ধান প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে বিএফআইইউ থেকে প্রাপ্ত সম্পদের তালিকা যাচাই করতে দুবাই সরকারকে চিঠি পাঠানো হবে এবং শিগগিরই দুবাইয়ে অনুসন্ধানের জন্য দুটি টিম পাঠানো হবে।
What's Your Reaction?