গ্যাসের চুলা নিভে থাকা অবস্থায় যে ক্ষতি হচ্ছে আপনার
বাংলাদেশে এখন প্রায় প্রতিটি জেলায় রান্নার জন্য গ্যাস ব্যবহার করা হয়। মাটির চুলা, বন্ধুচুলা, স্টোভ কিংবা কাঠের ভুসির চুলাও অনেকাংশে কমে গেছে। বিশেষ করে ঢাকা ও আঞ্চলিক শহরগুলোতে গ্যাস ব্যবহারের প্রবণতা বেশি।
বাংলাদেশে এখন প্রায় প্রতিটি জেলায় রান্নার জন্য গ্যাস ব্যবহার করা হয়। মাটির চুলা, বন্ধুচুলা, স্টোভ কিংবা কাঠের ভুসির চুলাও অনেকাংশে কমে গেছে। বিশেষ করে ঢাকা ও আঞ্চলিক শহরগুলোতে গ্যাস ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। তবে, আপনার রান্নার গ্যাসের চুলা কি আপনার এবং আপনার পরিবারের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তা হয়তো আপনি জানেন না বা বুঝে উঠতে পারেননি।
গ্যাসের চুলায় রান্না করার সময় বাতাসে ক্ষতিকর পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে, যা হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। গ্যাসের চুলা থেকে নির্গত ক্ষতিকর নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড আপনার স্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্যাসের চুলা ও প্রোপেন অ্যাপ্লায়েন্স ব্যবহারের ফলে ঘরের বাতাসে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার সমান।
অস্ট্রেলিয়ার এক জরিপে দেখা গেছে, দূষিত বায়ুর কারণে সেখানে প্রায় ১২ শতাংশ শিশুর হাঁপানিজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সেখানে ৩৮ শতাংশ মানুষ রান্নায় প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে, এবং এসব এলাকায় রান্নার সময় ঘরের বাতাসে কার্বন মনো অক্সাইড, পিএম ২.৫, বেনজিন, ফরমালডিহাইড, ও নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড পাওয়া গেছে। এসব উপাদান মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, বিশেষ করে শ্বাসনালী ও হাঁপানি সমস্যা তৈরি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, গ্যাসের চুলায় রান্নার সময় ইলেকট্রনিক চুলার তুলনায় তিন গুণ বেশি নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়। তাই ইলেকট্রিক চুলা এবং কুকার ব্যবহার করা শিশু এবং পরিবারের জন্য তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিকর।
তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে অধিকাংশ মানুষের পক্ষে বাড়তি বিদ্যুৎ বিলের কারণে ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। তাহলে, গ্যাসের চুলা থেকে নির্গত ক্ষতিকর পদার্থ যেমন নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে কীভাবে রক্ষা করবেন?
**এখানে কিছু কার্যকরী উপায়:**
- **গ্যাসের চুলা ব্যবহার কমানো:** যদি সম্ভব হয়, গ্যাসের চুলা ব্যবহার কমানোই সবচেয়ে কার্যকরী উপায়।
- **রান্নাঘরে চিমনি বা এক্সহস্ট ফ্যান ব্যবহার:** চিমনি থাকলে সেটি ব্যবহার করুন, অথবা এক্সহস্ট ফ্যান চালু রেখে রান্না করুন, যাতে ক্ষতিকর বাতাস বের হয়ে যায়।
- **প্রাকৃতিক বায়ু চলাচল:** রান্নাঘরে বায়ু চলাচলের জন্য জানালা বা দরজা খুলে রাখুন বা খোলামেলা রান্নাঘর তৈরি করতে পারেন।
- **ইলেকট্রনিক কুকার ব্যবহার:** ইলেকট্রনিক কুকার ও হিটার ব্যবহারে বায়ু দূষণের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
অবশেষে, রান্নাঘরের দূষিত বাতাস বের করে দেওয়া উচিত, যাতে আপনি এবং আপনার পরিবার সুস্থ ও নিরাপদ থাকতে পারেন।
What's Your Reaction?