শরীরী আবেদন ও অভিনয়ে ভাটা পড়েনি, তা প্রমাণ করলেন নিকোল কিডম্যান
পঁচাশিটা পেরিয়ে, ৫০-এ পা দিয়েই কি হারিয়ে যায় অভিনেত্রীর সোনালী জৌলুস? তবে কি স্পটলাইটের আভা ম্লান হতে থাকে? সিনেমার পর্দায় আগের মতো সম্মোহন ধরে রাখা যায় না? এসব প্রশ্ন হয়তো আগেই বহুবার উঠেছে, কিন্তু হলিউডের এই সুপারস্টার নিকোল কিডম্যান বারবার সেই ধারণাগুলোকে ভুল প্রমাণ করেছেন।
পঁচাশিটা পেরিয়ে, ৫০-এ পা দিয়েই কি হারিয়ে যায় অভিনেত্রীর সোনালী জৌলুস? তবে কি স্পটলাইটের আভা ম্লান হতে থাকে? সিনেমার পর্দায় আগের মতো সম্মোহন ধরে রাখা যায় না? এসব প্রশ্ন হয়তো আগেই বহুবার উঠেছে, কিন্তু হলিউডের এই সুপারস্টার নিকোল কিডম্যান বারবার সেই ধারণাগুলোকে ভুল প্রমাণ করেছেন।
বন্ধ ঘর। মায়াবী আলো। হাতে তরুণ ইন্টার্নের টাই। সেই টাইটি যেন এক নতুন জীবন নিয়ে ঘুরে ফিরে আসে তার গালে, নাকে ও ঠোঁটে। একসময় সেটা গালে চেপে ধরে, যেন সেই সুরঙ্গ থেকে বের হতে চায়। কেবল ৫৭ নয়, মনে হয় যেন সে আবার ২৭ বছরের কোনো কিশোরী। আর এই চরিত্রের অপ্রত্যাশিত রূপগুলো তার অভিনয়ে ঢুকে গেছে একেবারে প্রাকৃতিকভাবে।
হালিনা রাইনের পরিচালনায় ‘বেবিগার্ল’ ছবির চরিত্রটি কল্পনা করা ছাড়া অন্য কেউ এরূপভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন—এমন ধারণা বোধহয় অনেকেই পোষণ করেন। কিন্তু নিকোল কিডম্যান তা একদিনে ব্যাখ্যা করেছেন, যে তিনি কখনোই এক জায়গায় আটকে থাকেন না। বারবার নতুন কিছু করতে চান। বছরের পর বছর অভিনয় করে তার আগ্রহের কোনো কমতি হয়নি।
হলিউড অভিনেতা স্টিভ মার্টিন একটি রসিকতা করেছিলেন, “আমি মাঝেমধ্যে অভিনেতাদের বলি, নিকোল কিডম্যানের সঙ্গে আপনার দৃশ্যের জন্য আপনি নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ। ১০ বার কাজ করার মধ্যে ৯ বার একসাথে মিলিয়ে যায়।”
নিকোল কিডম্যানের উদ্দেশ্য কখনোই শুধু শিরোনামে থাকা বা বছরের সেরা হওয়া নয়। তিনি সবসময় নতুন চরিত্রের অনুসন্ধানে থাকেন। ‘বেবিগার্ল’ ছবির শিরোনামেও তিনি তেমন এক আকর্ষণ অনুভব করেছিলেন। অনেক অভিনেতা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেন এক perfect চরিত্রের জন্য, কিন্তু নিকোল বরাবরই খুঁজে চলেছেন নতুন নতুন প্রতিভা, নতুন নতুন পরিচালককে। ২০১৭ সালে তার প্রতিশ্রুতি ছিল যে, ১৮ মাসে অন্তত একবার তিনি নারী পরিচালকের সঙ্গে কাজ করবেন।
তিনি যে একজন শিল্পী হিসেবে নিজেকে অবিরাম নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন, তা প্রতিটি চরিত্রেই ফুটে উঠেছে। ‘ইনস্টিংক্ট’ ছবিটি দেখার পর, তিনি হালিনা রাইনকে বলেছিলেন, “আমি চাই আপনার সঙ্গে কাজ করতে।” প্রথমে রাইন অবিশ্বাস্য হয়ে উঠেছিলেন, কিন্তু তারপর বলেছিলেন, “আমি আনন্দে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম!”
নিকোল কিডম্যানের অভিনয়ের কিছু স্মরণীয় মুহূর্তের মধ্যে একটি হলো ‘এক্সপ্যাটস’ সিরিজের একটি দৃশ্য। এখানে তিনি ধনী মায়ের চরিত্রে অভিনয় করছেন, যিনি হারানো ছেলেকে খুঁজতে মর্গে যান। সেখানে একটি মৃতদেহ দেখার পর হঠাৎ অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন। এটি এমন একটি দৃশ্য, যা দর্শকদের জন্য কাঁপুনি তৈরি করে। অনেকটাই তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জন্ম নেওয়া এক ধরনের অপ্রত্যাশিত আবেগ।
অন্য একটি প্রকৃত উদাহরণ ‘দ্য পারফেক্ট কাপল’ ছবির একটি দৃশ্য, যেখানে নিকোল কিডম্যান তার সন্তানদের সামনে দীর্ঘদিন ধরে গোপন রাখা মিথ্যা প্রকাশ করে দেন। তার চরিত্রটি একজন এসকর্টের। স্বামীর সঙ্গে তার পরিচয়ও এসকর্ট হিসেবেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দৃশ্যটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়েছিল, এবং অনেকে এটি ব্যাপক প্রশংসা করেছিলেন।
নিকোল কিডম্যানের প্রতি মানুষের আগ্রহও বেড়ে গেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তার নাম সার্চ করা হয়েছে প্রায় ৮৮% বেশি। তার একটি বিজ্ঞাপন, যা মুভি থিয়েটারের জন্য শুট করা হয়েছিল, এখনো দর্শকদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। তিনি যখন বলেন, “উই কাম টু দিস প্লেস ফর ম্যাজিক”, তখন সেই মুহূর্তে দর্শকদের হাততালির আওয়াজ থেমে না। তার অভিনয় যেন এক জাদু, যা দর্শকদের হৃদয় থেকে মনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
৫৭ বছর বয়সেও, নিকোল কিডম্যান তার তরুণ সহকর্মীদের জন্য একটি অমূল্য বার্তা দিয়ে যান: “ভয় পেও না। থেমে যেও না। শুধু কাজ করে যাও।”
What's Your Reaction?