বৈষম্যবিরোধীদের ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে বিএনপিতে নানা সন্দেহের কারণ কী?

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের উদ্যোগ আপাতত সফল না হলেও এই উদ্যোগের পেছনে কারা রয়েছে, তা নিয়ে দলটির মধ্যে নানা ধরনের সন্দেহ ও আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। 

Jan 2, 2025 - 05:33
 0  1
বৈষম্যবিরোধীদের ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে বিএনপিতে নানা সন্দেহের কারণ কী?

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের উদ্যোগ আপাতত সফল না হলেও এই উদ্যোগের পেছনে কারা রয়েছে, তা নিয়ে দলটির মধ্যে নানা ধরনের সন্দেহ ও আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। 

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পাঁচ মাস পর, বিশেষ করে ‘বাহাত্তরের সংবিধানকে কবর দেওয়ার হুমকি’ দেয়ার কারণে, বিএনপির নেতাকর্মীরা এই ঘোষণাপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিয়ে ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত। তাদের ধারণা, এই উদ্যোগের সঙ্গে নির্বাচনের সময়সীমা বিলম্বিত বা দীর্ঘায়িত করার কোনো পরিকল্পনা থাকতে পারে। 

এছাড়া, বিএনপির মধ্যে একটি বিশ্বাস গড়ে উঠেছে যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা হয়তো কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের উস্কানিতে বা প্রভাবিত হয়ে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে তাদের মতে, এতে কোনো বিদেশি শক্তির ইন্ধন নেই। 

গত রোববার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন যে ৩১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ দেওয়া হবে এবং এতে ‘নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে’ অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা হবে এবং ‘মুজিববাদী সংবিধান কবরস্থ’ করার কথা বলা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, বাহাত্তরের সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত শাসনতন্ত্র, যা অপব্যবহার হলে সংশোধন করা যেতে পারে, তবে বাতিল করার প্রশ্ন কেন উঠছে?

দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল জানিয়েছেন, ঘোষণাপত্র প্রকাশের পিছনে আসল উদ্দেশ্য কি? এটি না জানলে নানা চিন্তা উদ্রেক হওয়াই স্বাভাবিক। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্রে’ যেসব বিষয় আনার কথা বলা হয়েছিল, সেগুলোর সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কম, তাই তাদের মতে এটি নির্বাচন বিলম্বিত করার একটি প্রচেষ্টা হতে পারে।

বিএনপি শুরু থেকেই সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সতর্ক মন্তব্য করে আসছে এবং আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ সংবিধান বাতিল হওয়ার মতো বক্তব্য দিলে, দলটির নেতারা এর সমালোচনা করেছেন।

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের পরপরই বিএনপির মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ঘোষণাপত্রের বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং তাতে কয়েকটি বিষয় উঠে আসে, যেমন- ছাত্রদের বাইরে থেকে কেউ উস্কানি দিচ্ছে কি না, অথবা এটি কোনো দলের কর্তৃত্ব জাহির করার প্রচেষ্টা কিনা।

এছাড়া, দলটি সন্দেহ করছে যে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা যদি ঘোষণাপত্র প্রকাশের মাধ্যমে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তবে তারা নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে। 

বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, বৈষম্যবিরোধীরা সরকারকে তাদের দাবির কথা জানাতে পারত, কিন্তু তারা একটি পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করেছে। 

তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন মনে করেন, বিএনপির মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের বিষয়ে সন্দেহের মূল জায়গা হলো নির্বাচন, বিশেষত বৈষম্যবিরোধী প্লাটফর্ম এবং সরকারসহ অন্যান্য শক্তির মধ্যে নির্বাচনের সময়সীমাকে কেন্দ্র করে একটি অলিখিত ঐক্য গড়ে উঠেছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow