প্রাথমিক ও মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়া বিষয়সমূহ

নতুন বছরের শুরুতে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে, যেখানে সাহিত্যের পাশাপাশি ইতিহাসভিত্তিক বিষয়বস্তুও পরিমার্জিত হয়েছে।

Jan 5, 2025 - 05:44
 0  0
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়া বিষয়সমূহ

নতুন বছরের শুরুতে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে, যেখানে সাহিত্যের পাশাপাশি ইতিহাসভিত্তিক বিষয়বস্তুও পরিমার্জিত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার এই পরিবর্তনগুলি করেছে, যার ফলে শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষত, ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনায় আনা সংযোজন-বিয়োজন নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কারের ঘোষণা দেয় এবং এর অংশ হিসেবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে পাঠ্যবইগুলো পরিমার্জন করে। নতুন বইগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতার ঘোষণাসহ বেশ কিছু বিষয় সংযোজন এবং বিয়োজন করা হয়েছে।

বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস এবং কবিতা বাদ দেওয়া হয়েছে। নতুন বইয়ে জুলাই অগাস্ট আন্দোলন এবং অন্যান্য বিষয়বস্তু যুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে নতুন গল্প ও কবিতাও রয়েছে। আগের বইয়ে শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ইতিহাসের তথ্য ও ছবি থাকলেও এবারের বইগুলোতে সেগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়নি। সেইসঙ্গে বইয়ের প্রথম অংশে জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতের উল্লেখও নেই।

পাঠ্যবইয়ের পেছনের মলাটে শেখ হাসিনার বাণী বাদ দেওয়া হয়েছে এবং এতে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতি স্থান পেয়েছে। কিছু নিয়মিত লেখক যেমন মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখা বাদ দেওয়া হয়েছে। 

এনসিটিবির চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেছেন, নতুন বইয়ের মাধ্যমে ইতিহাসে সবার অবদান নির্মোহভাবে তুলে ধরার প্রচেষ্টা করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, মুক্তিযুদ্ধে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের অনেকের অবদান উপেক্ষিত ছিল এবং অনেকের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক লেখা হয়েছিল। তাই পাঠ্যবইকে রাজনৈতিক প্রচারমাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের পরিবর্তে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা জরুরি হয়ে পড়েছিল।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তুর পরিবর্তন এবং নতুন কোনো ব্যাখ্যা যুক্ত হওয়া এক ধরনের ধারাবাহিকতা। ১৯৭৭ সালে প্রথম শিক্ষাক্রম প্রণয়নের পর ২০১২ সালে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হয় এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালে পাঠ্যবইগুলো পরিমার্জিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পাঠ্যবই পরিবর্তনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য একটি বড় ভূমিকা পালন করে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান আরও বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে অতিরিক্ত কিছু বাদ দেওয়া হয়েছে, তবে তার অবদান যথাযথভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, "মুক্তিযুদ্ধের সময় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, তাজউদ্দীন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী এবং জিয়াউর রহমানের মতো ব্যক্তিদের অবদানও পাঠ্যবইয়ে স্থান পেয়েছে।"

এছাড়া, প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর লেখা ‘সোনার ছেলে’ বাদ দেওয়া হয়েছে এবং নতুনভাবে ‘আমাদের চার নেতা’ নামে অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে এ কে ফজলুল হক, আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী দেওয়া হয়েছে। একইভাবে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বইগুলোতেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যেখানে শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যান্য নেতাদের ভূমিকা হাইলাইট করা হয়েছে, পাশাপাশি জুন-অগাস্ট আন্দোলনের ওপর লেখা নতুন অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow