নাসিরের নির্দেশ ছাড়া কোনো দলিলে স্বাক্ষর করেন না সাবরেজিস্ট্রার
এক সময় ছিলেন বাদাম বিক্রেতা। দিনমজুর বাবার সম্পত্তি ছিল মাত্র ৪ শতক। ঝিনাইদহের পুকুরিয়া গ্রামের বাজারে বাদাম বিক্রিসহ অন্যান্য ব্যবসা করতেন নাসির চৌধুরী।
এক সময় ছিলেন বাদাম বিক্রেতা। দিনমজুর বাবার সম্পত্তি ছিল মাত্র ৪ শতক। ঝিনাইদহের পুকুরিয়া গ্রামের বাজারে বাদাম বিক্রিসহ অন্যান্য ব্যবসা করতেন নাসির চৌধুরী। ভুয়া সনদে ৮ম শ্রেণি পাশ দেখানো সেই নাসির এখন কোটিপতি। স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে জমি রেজিস্ট্রির নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ‘নাসির ট্যাক্স’ নামে অঘোষিত রেওয়াজ চালু করেছিলেন, এবং তার অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে অত্যাচার ও হত্যার হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়া হতো। দুর্নীতির মাধ্যমে গড়ে তোলা নাসিরের অঢেল সম্পদের খোঁজ পায় দুদক, কিন্তু মামলা হওয়ার পরও তা কোনো অগ্রগতি দেখেনি।
জানা গেছে, ৩০ বছর আগে কালীগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে টি-বয় হিসেবে চাকরি নেন নাসির। এরপর সাবরেজিস্ট্রার আলতাফ হোসেনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে দলিল লেখক লাইসেন্স লাভ করেন তিনি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় এমপি আব্দুল মান্নান ও দলীয় নেতাদের সহযোগিতা নিয়ে দলিল লেখক সমিতির নিয়ন্ত্রণ নেন। পরে আনোয়ারুল আজীম আনার এমপি নির্বাচিত হলে তাকেও ম্যানেজ করে সমিতির সম্পাদক পদ দখল করেন। এসবের মাধ্যমে তিনি এলাকায় নিজের ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলেন এবং অতিরিক্ত অর্থ আদায় শুরু করেন।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, নাসির চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংকে ৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা জমা রেখেছেন এবং তার নামে ৫৯.২৭ বিঘা জমির সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০২১ সালে আদালত তার এবং তার দুই স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয়, তবে মামলার কোনো অগ্রগতি নেই।
নাসিরের প্রথম স্ত্রী খোদেজা বেগমের নামে যশোরের আল-আরাফাহ্ ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে। দ্বিতীয় স্ত্রী মাহফুজা খাতুনের নামেও ৫০ লাখ টাকা জমা রয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংক যশোর শাখায় তার নামে ৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লাখ লাখ টাকা জমা রয়েছে। কালীগঞ্জ শহরে তার রয়েছে ৩টি আলিশান বাড়ি, নদীপাড়ায় একটি এবং আরও কয়েকটি জায়গায় জমি।
এছাড়া, এলাকায় তার অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে নাসিরের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে নির্যাতন চালানো হতো। স্থানীয়দের মতে, নাসির রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে জনগণের উপর অত্যাচার চালাতেন এবং দলীয় লোকজনকেও তার নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে দিতেন না।
তবে, এসব অভিযোগের বিষয়ে নাসিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি এবং কোনো উত্তর দেননি। ঝিনাইদহ দুদকের সহকারী পরিচালক বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, মামলার কাগজপত্র পেয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং আগামী দু-এক মাসের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হবে।
What's Your Reaction?