কাজে আসছে না ২০০ কোটি টাকার অবকাঠামো, মূল্যবান সরঞ্জামাদি নষ্ট হচ্ছে
রাজধানীর হাজারীবাগ বেড়িবাঁধে ৫০ শয্যা শামসুন্নেছা আরজু মনি মা ও শিশু হাসপাতালটি ২০১৮ সালে উদ্বোধন হলেও এখনো আশপাশের নিম্ন-আয়ের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারেনি।
রাজধানীর হাজারীবাগ বেড়িবাঁধে ৫০ শয্যা শামসুন্নেছা আরজু মনি মা ও শিশু হাসপাতালটি ২০১৮ সালে উদ্বোধন হলেও এখনো আশপাশের নিম্ন-আয়ের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারেনি। হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি কেনার জন্য খরচ হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। কাগজে-কলমে হাসপাতালটিতে তিনজন চিকিৎসকসহ ১৭ জন কর্মী রয়েছেন, তবে সেখানে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা বা ওষুধ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। চিকিৎসা সরঞ্জাম না ব্যবহারের কারণে এসব সামগ্রী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, হাসপাতালটির আন্তঃবিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়নি এখনও। প্রতিষ্ঠার পর থেকে অধিকাংশ সময়েই হাসপাতালটির চিকিৎসকরা উপস্থিত থাকেন না। তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেলিনা আক্তার লিপি অসুস্থতার কারণে প্রায়ই ছুটিতে থাকেন এবং অন্য চিকিৎসকদের উপস্থিতি পাওয়া যায় না। এর ফলে, ২০০ কোটি টাকার হাসপাতালটি কোনো উপকারে আসছে না রোগীদের। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের যন্ত্রপাতি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, রোগীদের বিছানা, কেবিনেটসহ গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী ব্যবহার না হওয়ায় এগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
৩১ ডিসেম্বর ও ৬ জানুয়ারি সরেজমিনে হাসপাতালটি পরিদর্শন করা হলে দেখা যায়, চিকিৎসা পাওয়ার আশায় প্রায় অর্ধশতাধিক গরিব রোগী হাসপাতালের আউটডোরে ভিড় জমিয়েছেন, তবে চিকিৎসক না থাকায় সেবা কার্যক্রম চলছিল না। একমাত্র ভিজিটর রোগীদের নামমাত্র পরামর্শ দিচ্ছিলেন।
হাসপাতালের ৮ তলা ভবনে অপারেশন থিয়েটার, পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড, রোগীদের সাধারণ বিছানা ও কেবিনসহ পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি রয়েছে, তবে কর্তৃপক্ষ আন্তঃবিভাগ সেবা চালু করতে পারছে না। হাসপাতাল ভবনের পাশেই আরেকটি আটতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে চিকিৎসকদের ডরমেটরি হিসেবে, কিন্তু সেখানে আউটসোর্সিং ও মাস্টাররোল কর্মচারীদের পরিবার বসবাস করছে।
হাসপাতালে আসা রোগীর এক স্বজন সোহেল রানা জানান, "সকাল থেকে অপেক্ষা করেও ডাক্তার দেখাতে পারিনি। একজন চিকিৎসক আছেন, কিন্তু তিনি রোগী দেখেন না। অন্য দুই চিকিৎসকের কক্ষে তালা ঝুলছে। আমরা গরিব মানুষ, এখানে সরকারি সেবা পেতে আসি, কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় হতাশ হয়ে ফিরতে হয়। কখনো চিকিৎসককে পেলে ওষুধ সরবরাহ না থাকার অজুহাত দেওয়া হয়।"
হাজারীবাগের বাসিন্দা কারিমা বলেন, "আমার সন্তানের চিকিৎসার জন্য অনেকবার এখানে এসেছি, তবে বেশিরভাগ সময় চিকিৎসক পাইনি। একদিন চিকিৎসককে দেখাতে পারলেও কোনো ওষুধ দেওয়া হয়নি।"
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেলিনা আক্তার লিপি বলেন, "আমি কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে কিছুদিন ছুটিতে ছিলাম। হাসপাতালের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।"
ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. জিল্লুর রহমান যুগান্তরকে জানিয়েছেন, হাসপাতালটির দেখভালের দায়িত্ব তাদের নয়, এটি ডিজি অফিস নিয়ন্ত্রণ করে এবং যাবতীয় বরাদ্দও সেখান থেকেই হয়। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. মাইনুল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, "হাসপাতালটির ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
What's Your Reaction?