খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান কবে ফিরবেন, সংশ্লিষ্টরা কী বলছেন?
আজ মঙ্গলবার উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে রাত ১০টায় কাতারের একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা ত্যাগ করবেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে রাত ১০টায় কাতারের একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা ত্যাগ করবেন তিনি।
তবে খালেদা জিয়ার এই বিদেশ যাত্রা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে। অনেকেই জানতে চাইছেন, কেন চার মাস পরে চিকিৎসার জন্য তিনি বিদেশ যাচ্ছেন, যখন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতন ঘটেছে?
৫ জানুয়ারি রাতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সস্ত্রীক খালেদা জিয়াকে তার গুলশানের বাসভবনে দেখতে যান। সেখানে তাকে জানানো হয় যে, খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবেন। সেনাপ্রধান প্রায় ৪০ মিনিট সেখানে অবস্থান করেন, তবে এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে অন্য কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
সিনিয়র সাংবাদিক আশরাফ কায়সার মনে করেন, খালেদা জিয়া হয়তো সেনাপ্রধান থেকে দেশের বাইরে যাওয়ার নিশ্চয়তা পেয়েছেন, তাই তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, দেশের পরিস্থিতি এখনও অনিশ্চিত, তাই চিকিৎসার পর খালেদা জিয়া দেশে ফিরতে পারবেন কিনা বলা যাচ্ছে না। তবে আইনগতভাবে কোনো বাধা নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ লন্ডন থেকে ফিরে সাংবাদিকদের জানান, তারেক রহমান দেশে ফিরবেন, তবে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে কিছু সময় লাগবে। তিনি সেই পরিবেশের কোনো ব্যাখ্যা দেননি।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ জানান, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ই তাদের প্রধান অগ্রাধিকার। চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার সময় তারেক রহমানের সঙ্গে ফিরে আসার বিষয়টি পরে বিবেচিত হবে। তাকে এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে এবং তারেক রহমান তাকে রিসিভ করবেন।
খালেদা জিয়া কাতারের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডন যাবেন। সেখানে তাকে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হবে, পরবর্তীতে চিকিৎসার জন্য তাকে জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে পাঠানো হতে পারে। গত বছর, তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তার লিভার ও পেটের ফ্লুইড জমা ও রক্তক্ষরণ রোধে একটি বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতি (টিআইপিএস) সম্পন্ন করেছিলেন।
এই সফরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল থাকবে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন।
২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে ছিলেন খালেদা জিয়া, তবে ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের কারণে তার মুক্তি দেয় সরকার। তার পরিবারের বার বার বিদেশে চিকিৎসার আবেদনও প্রত্যাখ্যাত হয়। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে, ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন।
বর্তমানে খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নবায়ন হয়ে যাওয়ায় বিদেশ যাত্রায় আর কোনো বাধা নেই। তার চিকিৎসা দলের অনুমতি না থাকার কারণে এতদিন তিনি বিদেশ যেতে পারেননি।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দুটি স্থগিত রয়েছে এবং অন্যান্য মামলায় জামিনে রয়েছেন। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যেসব মামলা চলছে, সেগুলোর কিছু এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, খালেদা জিয়া চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসবেন। তারেক রহমানের মামলাগুলো আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়া কবে দেশে ফিরবেন তা তার চিকিৎসকদের ওপর নির্ভর করে।
এদিকে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক জানান, তারেক রহমানের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে না, কারণ সরকার বারবার আপিল করে এগুলো স্লো করে দিচ্ছে।
বিএনপির নেতারা আশা করছেন যে, খালেদা জিয়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে দেশে ফিরবেন এবং তারেক রহমান আইনি প্রক্রিয়া শেষে দেশে ফিরবেন।
What's Your Reaction?